চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে পরিস্থিতি অনুকূল ও কাঠামোগত সংস্কার ত্বরান্বিত করলে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ শতাংশের ওপরে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী এই সংস্থাটি।
সংস্থাটি আরো বলেছে, বাংলাদেশের উচিত ব্যাংক আমানত ও ঋণের সুদের ওপর যে সীমা আরোপ করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে বাজার ব্যবস্থার ওপরে ছেড়ে দেয়া। পাশাপাশি, সঞ্চয়পত্র থেকে বাজেট অর্থায়ন প্রক্রিয়া সরে আসা প্রয়োজন।
আর্টিকেল ফোর মিশনের আওতায় আইএমএফ একটি প্রতিনিধি দল গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করে। এই মিশন চলে যাওয়ার প্রাক্কালে গতকাল এক সংবাদ এই তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি। মিশনের নেতৃত্বে ছিলেন রাহুল আনন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইএমএফ বাংলাদেশকে আরো ৩০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।
আইএমএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি বলা হয়েছে, স্বাধীনতা পর থেকে গত ৫০ বছরের বাংলাদেশ অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে প্রশংসনীয় উন্নতি করেছে। তবে ২০৩১ সালে মধ্যে যদি দেশটি একটি উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় তবে তার জন্য দেশটিকে কাঠামোগত ইসু্যু ও আধুনিকায়নে দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
এ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে গত অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে।
আইএমএফ বলছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য, বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সরকারের হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে। স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে মহামারীর কারণে ব্যয় বাড়ায় এ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি এ অর্থবছরে আরো বাড়বে বলেই আইএমএফ মনে করছে।
আইএমএফ বলেছে, অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা। মহামারীর মধ্যে গত দুই বছরে সরকারের ঋণ বেড়ে গেলেও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং দেশে টিকাদান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে খুব বেশি ঝুঁকি দেখছে না আইএমএফ।
সার্বিক বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে যে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি রয়েছে, তাও জানিয়েছে আইএমএফ। সে জন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের নীতিকাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ক্ষত সারিয়ে অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য সরকারের সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া জরুরি। সেই সাথে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা উচিত। করপোরেট সুশাসন দিকেও নজর দিতে হবে। একই সাথে রাজস্ব খাতের আধুনিকায়ন, রাজস্ব ব্যয়ের যৌক্তিকীকরণ, সঞ্চয়পত্রকে বাজেটের সরাসরি অর্থায়নের সাথে সম্পৃক্ত না রাখা এবং জ্বালানির দাম নির্ধারণে একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সিনিয়র অর্থ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন অংশীদারদের সাথে আলোচনা করেছেন।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১