অতি-ধনীদের সম্পদের এক প্রতীক বিলাসবহুল ইয়টের মালিকানা। ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে মোনাকোর একটি ইয়ট শোর দৃশ্য। ছবি: এরিক গাইলার্ড/ রয়টার্স
কোভিড-১৯ মহামারিতে জীবিকার অবলম্বন হারিয়েছেন বহু মানুষ। তবু বিলিয়নিয়ার ধনী পরিবারগুলোর বাড়বাড়ন্ত হয়েছে একই সময়ে। মিলিয়ন ডলার সম্পদের অধিকারীরাও আরও ধনী হচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য জানানো হয়। ওয়ার্ল্ড ইন-ইক্যুয়ালিটি রিপোর্ট শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে সমাজ বিজ্ঞানীদের একটি নেটওয়ার্ক।
তাদের গবেষণা দেখিয়েছে যে, এ বছর বিলিয়নিয়াররা সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক গৃহস্থালি সম্পদের ৩.৫ শতাংশের মালিক। ২০২০ সালের প্রথমদিকে যা ছিল ২ শতাংশ। অর্থাৎ, মহামারি শুরুর ওই সময়ের তুলনায় চলতি বছর তাদের সম্পদ দেড় শতাংশ বেড়েছে।
মহামারি কালে ধনী অর্থনীতিগুলো নিজ জনগণের আয় হ্রাস কমাতে বিপুল প্রণোদনা দেয়। বিশ্বের অন্যান্য স্থানে ও উন্নয়নশীল দেশে তেমনভাবে সহায়তা না দেওয়ায়, দারিদ্র্য ব্যাপক হারে বাড়তে দেখা গেছে। অনেক দেশেই প্রণোদনার আসল সুবিধাভোগী হয়েছেন ধনী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
এসব কথা জানিয়ে গবেষণা নিবন্ধের প্রধান লেখক লুকাস চ্যান্সেল বলেন, 'কোভিড সংকট অতি-ধনীদের সাথে বাদবাকি জনসংখ্যার সম্পদের অসাম্য বিপুল হারে বাড়িয়েছে।'
গবেষণা নিবন্ধে অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের গবেষণা ও সে সম্পর্কিত উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহৃত হয়। এর মুখবন্ধ লিখেছেন অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী দম্পতি অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডাফলো। তারা দুজনেই ২০১৯ সালে সম্মাননা পান।
তারা লিখেছেন, 'আগামীর অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সম্পদের মালিকানা একটি প্রধান উৎস। সম্পদ থাকলে বাড়ে প্রভাব ও সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ। যেকারণে বৈষম্য আরও বাড়তে চলেছে।'
ব্যানার্জি ও ডাফলো এই পরিস্থিতিকে 'মুষ্টিমেয় কিছু ধনিক সম্প্রদায়ের হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতার চরম কেন্দ্রিকরণ' বলে উল্লেখ করেছেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় অনেক পুরোনো গবেষণার ফলাফল সংযোজিত হয়েছে। আরও যুক্ত হয়েছে ধনীদের নানান তালিকা ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ। এসব কিছুই মহামারিকালে স্বাস্থ্য খাত, সমাজ ব্যবস্থা, লিঙ্গ এবং বর্ণ ভিত্তিক বৈষম্য আরও বেড়ে চলার ইঙ্গিত দেয়।
চলতি বছর প্রকাশিত ফোর্বসের বার্ষিক বিলিয়নিয়ার তালিকায় স্থান পান রেকর্ড সংখ্যক বা ২ হাজার ৭৫৫ জন শত কোটি ডলার বা তার বেশি সম্পদের অধিকারী। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন ১৩ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার। গেল বছর যা ছিল ৮ লাখ কোটি ডলার।
নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ধনী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হলেও; চলতি বছর তারা মোট বৈশ্বিক সম্পদের ১১ শতাংশের অধিকারী হয়েছেন। আগের বছর যা ছিল ১০ শতাংশ।
এই ০.০১ শতাংশ শ্রেণির আওতাভুক্তরা প্রত্যেকে গড়ে অন্তত এক কোটি ৬৭ লাখ ইউরো গৃহস্থালি আয়ের অধিকারী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, লকডাউনের সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির অনলাইন নির্ভরশীলতা বাড়ার সুবিধা পেয়েছেন অতি-ধনীরা। বিভিন্ন বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বা শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি তাদের সম্পদকে আরও স্ফীত করেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সরকারি সহায়তার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ মহামারির অভিঘাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেয়েছেন। কিন্তু, সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী দুর্বল এমন দেশে দারিদ্র্য উচ্চ হারে বেড়েছে।
লুকাস চ্যান্সেল বলেছেন, 'এই ঘটনা দারিদ্র্য মোকাবিলায় কল্যাণ রাষ্ট্রের গুরুত্ব স্পষ্ট করছে।'
এছাড়া, চলতি বছর স্বাক্ষরিত বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর ওপর ন্যূনতম ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণের চুক্তিকে স্বাগত জানান গবেষকরা। ১৯৮০ এর দশকে কর্পোরেট ট্যাক্স গড়ে ২৪ শতাংশ থাকলেও, তারপর থেকে এই কর হ্রাসের এক প্রতিযোগিতায় নেমেছিল বিভিন্ন দেশের সরকার।
তবে উন্নত দেশে বেতনভোগী আয়কারীরা গড়ে যে পরিমাণ আয়কর দেন ১৫ শতাংশের সীমা তার চেয়ে কম হওয়ায় এ চুক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়।
সূত্র: রয়টার্স
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১