রফতানি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এই প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছাড়াল ৪ হাজার ২শ’ কোটি ডলার। সবশেষ গত ২৮ অক্টোবর এই মজুত ৪১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। গতবছর একই সময়ে মজুতের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, মূলত করোনাভাইরাসের ধাক্কায় অর্থনীতিতে সৃষ্ট নেতিবাচক অবস্থার কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় মজুত দিন দিন বাড়ছে।
গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয়। করোনা মহামারির ধাক্কা না থাকলে যা ৬০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি যেত। এরকম কম আমদানির প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১২ শতাংশ কমে আমদানি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। স্বাভাবিক সময় থাকলে কমপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার এই তিনমাসে অতিরিক্ত আমদানি খাতে ব্যয় হতো। আমদানির পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কাজে যে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো, তা এইসময় হয়নি। এটিও মজুত বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বড় বিস্ময় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের অর্থ দেশে পাঠানোর বিপরীতে নগদ সহায়তা হিসেবে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়ার সিন্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ায় বৈধ পথে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থ বছরের জুলাই-অক্টোবরে রেমিটেন্স আয়ের পরিমাণ ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি বছরের একই সময়ে উন্নীত হয়েছে ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশে। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে ছোট আকারে হলেও রপ্তানি বেড়েই চলেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম এ নিয়ে বলেন, প্রবাসী আয়ের কারণে রিজার্ভ বাড়ছে। করোনার মধ্যে রিজার্ভ বাড়ার খবর অর্থনীতির জন্য স্বস্তির। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারও স্থিতিশীল আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎসের মধ্যে আছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান ইত্যাদি। আর ব্যয়ের বড় জায়গা হচ্ছে আমদানি ব্যয়, নানা ধরনের ঋণ ও দায় পরিশোধ। এর বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চাঁদা দেয় বাংলাদেশ।
করোনার মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছাল। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, আমদানি দায় মেটানোর চাপ এলে এই রিজার্ভ নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে বাংলাদেশ।
সাধারণত, একটি দেশ তার ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখবে, এটাই রীতি হিসেবে মানা হয়। বাংলাদেশে এখন তা ১০ মাসের সমান। বেশি রিজার্ভ মূলত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য বাড়ায়। অর্থ প্রত্যাবাসন সহজ হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে, এই আস্থা তৈরি হয়।
দেশের ঋণমান নির্ধারণে রিজার্ভের গুরুত্ব আছে। রিজার্ভ ভালো থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তবে অলস রিজার্ভও খানিকটা মাথাব্যথার কারণ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভাবে রিজার্ভ বাড়তে থাকলে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১