চাপের মুখে পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫০ কোটি ডলারে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা তিন গুণেরও বেশি। আমদানি অনেক বেশি হারে বেড়ে যাওয়ায় এবং রেমিট্যান্সে পতন এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি হিসাবেও বড় অঙ্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৭৩২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। গত তিন মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে এক হাজার ৮২ কোটি ডলারের। আগের একই সময়ের চেয়ে যা ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। সব সময়ই দেশের রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি হয়। সাধারণভাবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৪১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ১৩১ কোটি ডলার বা ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।
মতামত জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, একদিকে চাহিদা বৃদ্ধি অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। রপ্তানিতেও উত্থান হয়েছে। আমাদের রপ্তানি বাড়লে স্বাভাবিকভাবে আমদানি বাড়ে। ফলে খুব শিগগির আমদানি কমবে বলে মনে হয় না। আমদানি বৃদ্ধির এ প্রবণতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারেও একটা চাপ থাকবে। ডলারের দর বেড়ে পণ্যমূল্য আরও বাড়বে। ডলারের দর বৃদ্ধি একই সঙ্গে দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্য বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ম্ফীতির ওপর চাপ তৈরি হবে। কেননা, জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পরিবহন ভাড়ার বিষয়টি জড়িত। পরিবহন ভাড়া বাড়লে সব জিনিসের দাম বেড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার বিক্রি করে চাপ কমানোর পন্থায় না গিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে, আপাতত ধীরে চল নীতিতে চলতে হবে। তাতে করে আমদানির চাহিদা কিছুটা কমবে।
জাহিদ হোসেন মনে করেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম এ পর্যায়ে থাকবে না। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কিছুটা কমবে। দক্ষতার সঙ্গে সাময়িক এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। দেশের বাজারে হঠাৎ করে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে একদিকে জনগণের ভোগান্তি হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলা হয়েছে। আগামীতে যেন এ রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সেবা খাতের আয়ে ৫৩ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। এবার তা আরও বেড়ে ৬৫ কোটি ডলার হয়েছে। অবশ্য প্রাথমিক আয়ের ঘাটতি ৭৮ কোটি ডলার থেকে কমে ৭৩ কোটি ডলারে নেমেছে। আর সেকেন্ডারি আয় ৬৮৩ কোটি ডলার থেকে কমে ৫৫৭ কোটি ডলারে নেমেছে। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চলতি হিসাবে ৩৪৮ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে ঘাটতি হয়েছে ২৩১ কোটি ডলারের। সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্য ৮১ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে যেখানে ৩১০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি হয় দুই হাজার ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা প্রায় ৫০০ কোটি ডলার বেশি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর আমদানি বেড়েছিল ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লেও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কারণে বিদেশের সঙ্গে লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছিল। গত অর্থবছর শেষে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ৩৮০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে ৪৭২ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১