করোনায় ঋণখেলাপি বেড়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টির আশঙ্কা

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২০-১২-১৪ ২১:০৩:১৩

image

করোনার কারণে দেশে করপোরেট ও গৃহস্থালি ঋণখেলাপি বেড়ে একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)।

আইসিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের সাথে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বৃদ্ধির হার রেকর্ড করেছে, যা দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্য কমাতে সহায়তা করেছে। কিন্তু করোনার মতো মহামারীর কারণে দেশে অর্থনৈতিক খাতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল সোমবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আইসিসি, বাংলাদেশের ২৫তম বার্ষিক কাউন্সিলে নির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আইসিসি, বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান এ কথা বলেছেন। আইএলও’র প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেছেন যে, বাংলাদেশ এখন মহামারী ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলো কেবল স্বল্প মেয়াদে সীমাবদ্ধ নয়, শ্রম ও মূলধন উভয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বড় উৎপাদনের দিকেও প্রসারিত। অর্থনৈতিক সঙ্কট করপোরাল এবং গৃহস্থালি ঋণখেলাপির মাধ্যমে আর্থিক সঙ্কটে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আইসিসি, বাংলাদেশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইসিসি’র এ সম্পর্কিত এক প্রেস রিলিজে গতকাল বলা হয়েছে, অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির মতো বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেশ কয়েককটি মূল সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই রফতানি, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রেমিটেন্স-প্রবাহ। বাংলাদেশে প্রায় ৭৮ লাখ এন্টারপ্রাইজ রয়েছে, যার ৯০ শতাংশই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজেস। জিডিপিতে এই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলোর অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ, অর্থের পরিমাপে যার পরিমাণ প্রায় সাত হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার। ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজগুলো চাপের মধ্যে পড়েছে। উপরন্তু, অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে। আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩০ শতাংশ সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হলে প্রধান রফতানি দেশগুলোতে বাণিজ্য অগ্রাধিকারসহ অন্যান্য অগ্রাধিকার হারাবে। সুতরাং বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রধান রফতানি দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ওপর জোর দিতে হবে।

আইসিসিবির নির্বাহী পর্ষদের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ধাপ ইতোমধ্যে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে যা অর্থনৈতিক মন্দাকে আরো দীর্ঘায়িত করবে। এ ফলে অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির মতো বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে, যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই রফতানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আটকে থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের তাদের কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং সরবরাহ চেইনকে কার্যকর ও ব্যয়সাশ্রয়ী রাখতে এমএসএমইগুলো (ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ) সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি।

মহামারীটি একটি বিশাল অর্থনৈতিক সঙ্কোচনের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে বিশ্বের বহু অঞ্চলে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেবে, কারণ নন-পারফর্মিং করপোরেট ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
আইসিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রচারের অংশ হিসেবে আইসিসি হেডকোয়ার্টার সরকারগুলোকে এই মর্মে উদ্বুদ্ধকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, যাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং তাদের কর্মীদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রণোদনা প্রচেষ্টাগুলো প্রত্যক্ষ এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত প্রকৃত অর্থনীতির দিকে প্রবাহিত হয়।

বার্ষিক কাউন্সিলে আইসিসি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট লতিফুর রহমান; আইসিসি বাংলাদেশের নির্বাহী বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য ওয়ালিউর রহমান ভূঁইয়া, ওবিই; বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক; অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর এলাহীর স্ত্রী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মিসেস নীলুফার মনজুর; জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ একাধিক ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১