গ্রামীণ ব্যাংকের ৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০৯-২৩ ১১:১৮:৫৪

image

এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় ব্যাংকটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভ্যাট আইন অনুযায়ী নিবন্ধন গ্রহণ না করে ভ্যাটযোগ্য সেবা প্রদান করায় আরেকটি অনিয়ম মামলা দায়ের করেছে রাজস্ব বিভাগের ভ্যাট গোয়েন্দারা।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির জানুয়ারি/২০১১ হতে ডিসেম্বর/২০১৬ পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। তদন্তকালে গ্রামীণ ব্যাংকের এই অনিয়ম বের হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেবার কোড এস ০৫৬-এর আওতায় ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে মিরপুর ২ নম্বরে অবস্থিত গ্রামীণ ব্যাংক। কিন্তু ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি এখনো নিবন্ধন গ্রহণ করেনি। মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১-এর ধারা ১৫-এর উপধারা (১) অনুযায়ী, করযোগ্য পণ্যের সরবরাহকারী বা করযোগ্য সেবা প্রদানকারীকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এনবিআরের এস আরও নং ১৮৩/২০১২ অনুযায়ী, টার্নওভার নির্বিশেষে ব্যাংক ও নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন গ্রহণ করতে হবে। এসআরও নং ১৬৮/২০১৩ অনুযায়ী, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং সেবা বলতে বোঝায়- রাষ্ট্রয়ত্ব, দেশীয় বা বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ধারা ২-এর দফা (খ)-তে সজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা, যারা কমিশন, ফি বা চার্জের বিনিময়ে যেকোনো মাধ্যমে ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ধারা ২-এর দফা (খ)-এর উপধারা (অ) অনুযায়ী, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি বা গৃহায়ণের জন্য ঋণ প্রদানকারীকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক মূলতঃ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কিস্তি সুবিধায় ঋণ প্রদান করে থাকে। গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম, উক্ত আইনের অন্তর্ভুক্ত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে প্রদত্ত এসব ঋণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে চার্জ, ফি ও কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে, যার উপর ১৫% হারে ভ্যাট প্রযোজ্য এবং করযোগ্য সেবা প্রদান করায় তাদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক।

এছাড়া ভ্যাট বিধিমালা ১৯৯১ এর বিধি ১৮(ক) অনুযায়ী, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর কর্তনকারী সত্ত্বা এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট কর্তনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানটি সি.এ. ফার্ম কর্তৃক প্রত্যায়িত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত অন্যান্য দলিলাদি আড়াআড়ি যাচাই/পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত চলাকালীন প্রতিষ্ঠানের একাধিকবার আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেয়া হয়েছে।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে প্রদত্ত বিভিন্ন সেবা হতে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৯১০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা উৎঘাটন করা হয়। ভ্যাটযোগ্য প্রদত্ত সেবা হতে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে ডিসেম্বর/২০১৬ পর্যন্ত ২% হারে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ ৮ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর্তন বাবদ প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৬ টাকা উদঘাটন করা হয়। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের উপর ডিসেম্বর/২০১৬ পর্যন্ত মাসিক ২% হারে ৭ কোটি ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা সুদ প্রযোজ্য হবে।

বর্ণিত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৬ টাকা এবং সুদ বাবদ ২১ কোটি ২৩ লাখ ২২ হাজার ৬৮৩ টাকাসহ সর্বমোট ৬৬ কোটি ৯৮ লাখ ৬০ হাজার ৬২৯ টাকা ভ্যাট পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব হিসেবে আদায়যোগ্য।

উদঘাটিত পরিহারকৃত রাজস্ব আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও অনিয়ম মামলা সংশ্লিষ্ট ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট প্রেরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাতে প্রতি মাসের সকল আয় ও ক্রয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করে তা মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানটিকে অতি সত্ত্বর ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান করার জন্য এবং তাদের মাসিক রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১