ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দার কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সকল প্রকার অনাদায়ী ঋণ শ্রেণীকরণ না করে নবায়নের সুযোগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আব্দার করেছে তৈরী পোশক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ। একই সাথে বেতনভাতার বিপরীতে প্রদত্ত ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৮ মাস থেকে ৩৬ মাস করার দাবি করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি চিঠিতে এ আব্দার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার কারণে রফতানি আদেশ স্থগিত হয়েছে। আবার রফতানি করলেও রফতানির বিল দেশে আসছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। এমনি পরিস্থিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আনাদায়ী ঋণ খেলাপি না করতে বিজিএমএই থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
গভর্নরের কাছে প্রেরিত বিজিএমইএর চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের বেশির ভাগ অর্জিত হচ্ছে তৈরী পোশাক থেকে। সরকার এই খাতের উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সবসময় সহানুভূতিশীল ও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। বর্তমান করোনাভাইরাসে অতিমারীর সময় সরকার তৈরী পোশাক খাতকে আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করে এ খাতকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করে।
বিজিএএমই নেতৃবৃন্দ আশা করেছিল, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন হ্রাস পাবে এবং তৈরী পোশাক ও বস্ত্র খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিদেশী ক্রেতারা ক্রয়াদেশ প্রদান শিথিল করেছে। এবং যে সকল পণ্য ইতোমধ্যে রফতানি করা হয়েছে তার বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে রফতানি মূল্য প্রদান করাও বন্ধ করে দিয়েছে বা দীর্ঘায়িত করছে।
চিঠিতে বলা হয়, বিদেশী ক্রেতা ও শ্রমিকদের ধরে রাখতে সঙ্কটকালীন সময়েও তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে তৈরী পোশাক রফতানি করে যাচ্ছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, এতে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রফতানি আদেশ প্রদানের পরিমাণ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এসব রফতানি আদেশের বিপরীতে পেমেন্ট পেতে আরও কয়েক মাস সময় প্রয়োজন হবে। এ কারণে উদ্যোক্তারা সমন্বিত তারল্য সঙ্কটের মধ্যে থাকবে।
এই সকল নানাবিধ প্রতিকূলতার মধ্যেও উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা চলমান রেখেছেন এবং তাদের বিনিয়োগ ধরে রাখতে অপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য পূবের্রর ন্যায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসার কারণে এবং তারল্য সঙ্কটের কারণে সকল ধরনের ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে বর্তমানে দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এমনি পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস অতিমারীর প্রভাব মোকাবেলা করে রফতানীমুখী তৈরী পোশাকখাত যাতে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা ধরে রাখতে পারে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রাখতে পারে সেজন্য সকল ধরনের ঋণের বিপরীতে ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রেণীকরণ না করে এবং ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার নবায়নের সুযোগ প্রদান করতে গভর্নরের কাছে অনুরেনাধ করা হয়েছে।
গত ২২ আগস্ট বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাক্ষরিত গভর্নরের কাছে প্রেরিত অপর একটি চিঠিতে পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য দেয়া ঋণের কিস্তির মেয়াদ দ্বিগুণ করার অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও ভেরিয়্যান্টের কারণে বিদেশী ক্রেতারা ক্রয়াদেশ প্রদান শিথিল করেছে এবং যেসব পণ্য ইতোমধ্যে রফতানি করা হয়েছে তার বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে রফতানি মূল্য প্রদান করাও বন্ধ করে দিয়েছে বা দীর্ঘায়িত করছে। পোশাক শিল্প খাতের মালিকরা শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। এই সঙ্কটকালীন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রদত্ত ঋণ পরিশোধের কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।
চিঠিতে বিদেশী ক্রেতা এবং শ্রমিকদেরকে ধরে রাখতে সঙ্কটকালীন সময়েও তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে তৈরী পোশাক রফতানি করে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পকে এই সঙ্কটময় সময়ে টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাত প্রদানের জন্য প্রদত্ত ঋণ পরিশাধের কিস্তির সংখ্যা ১৮টির পরিবর্তে ৩৬টি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য স্বল্প সুদে প্রথমে তিন হাজার কোটি টাকা ও পরে আরো দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। ৬ মাসের গ্রেস পিড়িয়ড দিয়ে পরের এক বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের শর্ত দেয়া হয়েছিল।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১