ব্যাংক মুনাফার ১১৪ কোটি টাকা বিশেষ সিএসআরে ব্যয় করতে হবে

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০৮-০৪ ২১:৫৮:১৯

image

ব্যাংকের করপরবর্তী নেট মুনাফার ১ শতাংশ অর্থের সমপরিমাণ প্রায় ১১৪ কোটি টাকা করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) আওতায় বিশেষ সিএসআর খাতে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ অর্থ ব্যয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তদারকির সুবিধার্থে প্রতি ১৫ দিন অন্তে অর্থ ব্যয়ের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর নানা সিএসআর কার্যক্রম করে থাকে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক সারা বছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার পুনরায় বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে দারিদ্র্যহার বৃদ্ধির ফলে বিপদগ্রস্ত, কর্মহীন দরিদ্র, ছিন্নমূল, দুস্থ, অসহায় জনগোষ্ঠীর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ এবং কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনের উদ্দেশ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২০২১ সালের সিএসআর বাজেটে অতিরিক্ত ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখার নির্দেশনা ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের ৬৪ ব্যাংক সবগুলোরই করপরবর্তী নেট মুনাফা নেই। অনেক ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। এ কারণে যেসব ব্যাংকের কেবল করপরবর্তী মুনাফা রয়েছে সেগুলোকেই অতিরিক্ত ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছে। এক হিসেবে বিদ্যমান সিএসআর কার্যক্রমের অতিরিক্ত ১ শতাংশ অর্থ হয় প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, এনজিও, এমএফআই, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং সেনা কল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জুলাইয়ের মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্য থেকে বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই গতকাল নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোরশেদ মিল্লাত স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর সিএসআর কার্যক্রম তদারকি করতে ১৫ দিন অন্তে ব্যাংকগুলোর এ সংক্রান্ত কার্যক্রমের একটি প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। আর প্রথম প্রতিবেদন আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোকে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এর আগে বলা হয়েছিল, বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো ২০২০ সালের নিরীক্ষিত (হিসাব বিবরণী চূড়ান্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে অনিরীক্ষিত) হিসাব অনুযায়ী যে পরিমাণ নিট মুনাফা অর্জন করেছে তার ১ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ চলতি বছরের সিএসআর খাতের বাজেটে ইতোমধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত হিসেবে বরাদ্দ করতে হবে। বিশেষ সিএসআর বাজেট হতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সামগ্রীসহ চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ এবং কর্মহীন মানুষের জীবিকা নির্বাহে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজের সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর বস্তিবাসী, ছিন্নমূল এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য; বিভিন্ন জেলার হতদরিদ্র, সাময়িক কর্মহীন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা করোনাভাইরাসজনিত রোগ বিস্তারের কারণে স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা নির্বাহে অসমর্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের জন্য ব্যয় করতে হবে।

অপর দিকে বিশেষ সিএসআর খাতে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ অর্থ সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয় করতে হবে। এ অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা যাতে কোনো বিশেষ এলাকায় কেন্দ্রীভূত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সহায়তায় অথবা শীর্ষপর্যায়ের এনজিও, এমএফআইগুলোর মাধ্যমে অথবা উভয় প্রকারে প্রস্তাবিত বিশেষ সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে পৃথক হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় আলোচ্য সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অনুকূলে পরিচালিত হিসাব এবং এনজিও, এমএফআইর মাধ্যমে পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এনজিও , এমএফআইর নামে রক্ষিত হিসাবে টাকা জমা বা স্থানান্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ, উপকারভোগীর সংখ্যা, সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের নামসহ বিস্তারিত তথ্যাদি ব্যাংক কর্তৃক সংরক্ষণ করতে হবে।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১