প্রণোদনার টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে চিন্তিত ব্যাংক

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০৮-০৩ ২১:৩১:৫৯

image

প্রণোদনার ঋণের টাকা ফেরত আসবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকগুলো। কারণ, ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা এ দেশে আছে। করোনার মতো সংকটের সুযোগে অনেকে ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারেন। বিষয়টি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে স¤প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার ‘সা¤প্রতিক মুদ্রানীতি কি অর্থনীতির বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে? সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে ২০২১-২২ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তার ওপর সিপিডির লিখিত বিশ্লেষনও উপস্থাপন করা হয় গণমাধ্যমের সামনে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন অনলাইনে এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন। এ সময়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যান্য গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

সিপিডি’র বিশ্লেষনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা ও আয় কমে যাওয়ায় গরীব ও নি¤œ আয়ের মানুষেরা জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে আগের চেয়ে অনেক বেশি হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির হারের যে উপাত্ত দেয়া হচ্ছে, প্রকৃত অবস্থা বা হার তার চেয়ে অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানকে অধিকতর বাস্তবসম্মত করার স্বার্থে এবং তাতে জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রকৃত অবস্থা ভালভাবে প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নতুন ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) তৈরির সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সিপিডি মনে করে, ১৬-বছরের পুরোনো সিপিআই ব্যবহার করে ভোগব্যয়ের যে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঠিক অবস্থা প্রতিফলিত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেব অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরের দেশের বাষির্ক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নতুন ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির গড় হার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রণোদনার টাকা বড় উদ্যোক্তারা ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু ছোট উদ্যোক্তারা প্রণোদনার অর্থ তেমন পাচ্ছেন না। ফলে ছোটরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না, তাঁরা পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। মহামারির সময় এতে বৈষম্য বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা আছে। সিপিডি মনে করে, বাজারে এখন অধিক তারল্য আছে। উৎপাদনশীল খাতে অর্থ না গিয়ে শেয়ারবাজারে যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। তারা বলছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রণোদনার অর্থ শেয়ারবাজারে যাচ্ছে। সিপিডি মনে করে, করোনার কারণে অর্থনীতির এই অবস্থায় শেয়ারবাজার চাঙা হওয়ার কারণ নেই।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইদানীং সন্দেহজনক স্টকে বিনিয়োগ বাড়ছে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কোথাও ‘ফাউল প্লে’ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, নাকি শেয়ারের দাম বাড়িয়ে টাকা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করতে পারে।

প্রবাসী আয় অধিক তারল্য সৃষ্টি করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন পরিবারের আয় কমেছে, তাদের সহায়তায় বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসছে। ২ শতাংশ প্রণোদনাও কাজ করছে। রেমিট্যান্সের টাকা বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।

সিপিডি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জনে এই মুদ্রানীতি খুব সহায়ক হবে না। ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ করতে হবে। এই করোনার সময়ে ব্যক্তি খাতে এত ঋণ দেওয়া কঠিন। এতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে হবে না। আর এই সময় সাময়িক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে যেন পুরোনো সংস্কারের কথা আমরা ভুলে না যাই। একই সঙ্গে অধিক তারল্য ব্যবহারে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে।

সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী কয়েক মাস অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে পারলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দিতে হবে।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১