আজ বহু প্রতিক্ষিীত মহেন্দ্রক্ষণ ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপন শুরু হয়েছে ভোর থেকেই। দিনটি উদযাপন করবে দেশ ও বিদেশের মানুষ। দিনটিকে ঘিরে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বিভিন্ন প্রস্তুতি শেষ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রিশ তলা ভবনের নিচে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবি টানানো হয়েছে কর্মকর্তাদের জন্য। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগনানা শুরু হয়েছে ৭ মার্চ। সাজানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিটি প্রবেশ দ্বার। পাশাপাশি লাল সবুজ আলোতে আলেকিত রাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় মুজিব বর্ষ উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকার মুজিব বর্ষ উদযাপন করবে। দেশের ভেতর ছাড়াও বিভিন্ন দেশে উদ্যাপিত হবে জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিব বর্ষের আনন্দ আয়োজন।
করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ থেকে বঙ্গবন্ধু নামার পর পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক উৎসবমুখর পরিবেশে লাখো মানুষ বরণ করে নিয়েছিলের তাদের প্রিয় নেতাকে। ঐতিহাসিক সেই দিনকে বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকারের জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা হিসেবে।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে ২২৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।এছাড়া, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রস্টে অনুদান দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রিশ তলা ভবনের নিচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবনের বিভিন্ন সময়ের ৫৫টি ছবি টানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হবে । আজ সকাল আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এদিকে, দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন শাখায় মুজিব কর্নার উদ্বোধন করেছে। সরাকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:, মার্কেন্টাইল, ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি, আল-আরাফাহ ইসলামি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাং, প্রাইম ব্যাংক সহ বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যেই মুজিব কর্নার স্থাপন করেছে। জানা গেছে, এবছরের মধ্যে দেশের সবগুলো ব্যাংক উদ্বোধন করবে মুজিব কর্নার।
ব্যাংকাররা জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যাংকগুলো মিলাদ মাহফিল, মুজিব কর্নার উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন, ফুলের শুভেচ্ছা, মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা, স্কুল মেরামত এবং গরীব দুঃখীদের মধ্যে খাবার বিতরণের আয়োজন করেছে অনেক ব্যাংক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বহুমুখী কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও পিছিয়ে নেই। তারা নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
২০০ টাকার নোট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে দেশে প্রথমবারের মতো মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ২০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট ছাড়তে যাচ্ছে। জানা যায়, বাজারে প্রচলিত ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার মতোই ২০০ টাকার নোট ছাড়া হবে। দুই ধরনের ২০০ টাকার নোট ছাড়া হবে, তবে ২০২১ সাল থেকে কেবল নিয়মিত নোট থাকবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী বা মুজিব বর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ১০০ টাকা মূল্যমানের সোনা ও রুপার স্মারক মুদ্রা ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০০ টাকার নোটের ওপর ‘মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বিশেষ নোট’ কথা লেখা থাকবে। তবে ২০২১ সাল থেকে যে নোট ছাড়া হবে, তাতে তা লেখা থাকবে না।
৫০০ চাষিকে ঋণ দিল রূপালী ব্যাংক
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে পাইলট প্রকল্পের আওতায় নাটোরের ৫০০ টমেটো চাষিকে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ দিয়েছে রূপালী ব্যাংক। ‘মুজিব বর্ষের স্পর্শে স্পন্দিত রূপালী ব্যাংক’—এই প্রতিপাদ্যে ১ জানুয়ারি থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে টমেটোচাষিদের মধ্যে ‘জিরো কুপন লেন্ডিং’ কর্মসূচির আওতায় ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে রূপালী ব্যাংক। পাইলট প্রকল্প হিসেবে নাটোরের ৫০০ টমেটো চাষিকে ৫০ হাজার টাকা করে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৯-২০ অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা অনুযায়ী এই পরিমাণ ঋণ দিয়ে কৃষক ১ দশমিক ২৯ একর জমিতে টমেটো চাষ করতে পারবেন।
জনতা ব্যাংকের মুজিব বর্ষ স্মারক ঋণ
দেশে দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে জনতা ব্যাংক ‘মুজিব বর্ষ স্মারক ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছে। এর আওতায় শিক্ষিত দরিদ্র বেকার যুবক-যুবতীদের স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জনতা ব্যাংক বিশেষ এই ঋণ কর্মসূচি চালু করছে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে ‘মুজিব বর্ষ স্মারক ঋণ’ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। চলতি বছর এটি চালু হলেও পরবর্তীতে এই ঋণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
সোনালী ব্যাংক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রাণ দরিদ্র্য কৃষকের জন্য সুদবিহীন ঋণ বিতরণ কর্মসূচি চালু করছে সোনালী ব্যাংক। এছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে (সম্মুখ সমর, শিল্প-সাহিত্য, সঙ্গীত-সাংস্কৃতিক) বিরোচিত ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ প্রদান করবে তারা। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত জুরি বোর্ড এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদেরও সম্মাননা দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। বঙ্গবন্ধুর ওপর বিশিষ্ট গবেষক ও লেখকদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থ সংকলন ও প্রকাশেরও উদ্যোগ নেবে সোনালী ব্যাংক।
জনতা ব্যাংক
শিক্ষিত বেকার ও অসচ্ছল তরুণ-তরুণীদের জন্য ‘জনতা ব্যাংক বঙ্গবন্ধু শুভ সূচনা’ নামক ঋণ বিতরণ স্কিম চালু করবে জনতা ব্যাংক। এছাড়া ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী শুভ হোক’ শীর্ষক সিলমোহর এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ-সংবলিত বুকলেট প্রকাশ করবে তারা। এর বাইরে প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী/যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা এবং তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের ভূমিকা শীর্ষক বছরব্যাপী আলোচনা ও ভিডিও প্রদর্শন কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
অগ্রণী ব্যাংক
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অভিষ্ট লক্ষ্য পূরণে ‘অগ্রণী গ্রাম’ নামে যেকোনো একটি গ্রামের মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্যানিটেশন, সুপেয় পানি, সুস্বাস্থ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এর ন্যূনতম ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ ও আমানতে যেসব গ্রাহক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে, তাদের মধ্য থেকে বার্ষিকভিত্তিতে শীর্ষস্থানীয় একাধিক গ্রাহককে ‘বঙ্গবন্ধু গ্রাহক সন্মাননা’ দেয়ারও পরিকল্পনা নিয়েছে অগ্রণী।
রূপালী ব্যাংক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বছরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এ লক্ষ্যে বছরব্যাপী ব্যাংকের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ‘মুজিব বর্ষের স্পর্শে নন্দিত ২০২০’ এমন নতুন স্লোগান নির্ধারণ করেছে। রূপালী ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা মাত্র এই স্লোগানের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হচ্ছে গ্রাহককে। এর মাধ্যমে এই ব্যাংক তার সকল গ্রাহককে মুজিব বর্ষের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে শুধু স্লোগান নির্ধারণেই থেমে থাকেনি রূপালী ব্যাংক। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। এজন্য তাদের সিএসআর খাত থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে প্রত্যেক অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য একটি করে গৃহনির্মাণ করে দেবে। এর আওতায় প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা এই সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি মুজিব বর্ষকে স্মরণীয় রাখতে দরিদ্র্য কৃষকের জন্য সুদবিহীন ঋণদান কর্মসূচিও রেখেছে রূপালী ব্যাংক। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনের ওপর গবেষণার জন্য এ খাতে পাঁচ লাখ টাকা হারে আর্থিক অনুদানও দেবে রূপালী ব্যাংক।
বেসিক ব্যাংক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু শতায়ু সঞ্চয় প্রকল্প’ চালু করবে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের বয়স্ক নাগরিকদের অনেকেরই বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থকড়ি থাকে না। ফলে ছেলে-মেয়ে বা অন্য কারো ওপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার থাকে না। এমন বিবেচনায় একজন নাগরিককে অল্প বয়স থেকেই বৃদ্ধ বয়সের অবলম্বন হিসেবে কিছু টাকা জমানোর সুযোগ দেয়ার জন্য এই মাসিক সঞ্চয় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এদিকে ‘বঙ্গবন্ধু শতায়ু সঞ্চয় প্রকল্প’ ছাড়াও জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বেসিক ব্যাংক দেশের সবকটি বিভাগে একটি করে নির্বাচন করে সেখানে একটি আলমারি, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ওপর পুস্তিকা সরবরাহ করবে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে স্বল্প সুদে (মাত্র ৭ শতাংশ) বিশেষ ঋণদান কর্মসূচি (কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ) হাতে নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংকের নিজস্ব উৎস থেকে দারিদ্র্যবিমোচনে বিশেষ ঋণদান কর্মসূচির আওতায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ শুরু হবে। এতে অতি দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী, যাদের জামানত দেয়ার সক্ষমতা নেই তাদেরও এই কর্মসূচির আওতায় ঋণ দেবে কৃষি ব্যাংক। তাছাড়া এর মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচজনের গ্রুপভিত্তিক ঋণও প্রদান করা হবে। শাখা ব্যবস্থাপক তার নিজ ক্ষমতায় এই ঋণ দিতে পারবেন। কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মাঝে কৃষিভিত্তিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে। পাশাপাশি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এছাড়া মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠায় কৃষি ব্যাংক তিনজন ভালো ঋণ গ্রহীতা এবং ব্যাংকের সেরা পারফরমেন্স অর্জনকারী তিনজন শাখা ব্যবস্থাপককে বিশেষ পুরস্কারও দেবে।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন, পুস্তক ক্রয়, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান, কোটপিন পরিধান, ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি, আমানত এবং ঋণ কর্মসূচি প্রবর্তন, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার প্রদান ও আলোচনা সভা এবং র্যালি করবে তারা। এসইসি : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বঙ্গবন্ধু মেধাবৃত্তি প্রদান করবে। কমিশনে কর্মরত সব শ্রেণির কর্মচারীদের মেধাবী সন্তানদের মধ্যে তা প্রদান করা হবে। এ জন্য এক কোটি টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখা হয়েছে।
আরডিএ
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া বিমা, বঙ্গবন্ধু বিমা বৃত্তি ও বঙ্গবন্ধু বিমা পুরস্কারের আয়োজন করবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু বিমা মেলারও আয়োজন করবে তারা।
এমআরএ
ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) আওতাভুক্ত সনদপ্রাপ্ত ৭২৩টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) আওতায় ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকদের সন্তানদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু উচ্চশিক্ষা বৃত্তি’ প্রদান করবে। প্রাথমিকভাবে ১৫০ জনকে এ বৃত্তি দেবে তারা। পরবর্তীতে পরিধি আরও বাড়াবে।
বিডিবিএল
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) শ্রদ্ধা নিবেদন, কুরআনখানি, দোয়া ও মুনাজাত, পথশিশু এবং দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কর্মসূচি পালন করবে। এছাড়াও রয়েছে আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি, বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন, অনুদান প্রদান, প্রকাশনা, ওয়েবসাইট ও বিলবোর্ড এবং ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ প্রচারের উদ্যোগ।
সাধারণ বিমা কর্পোরেশন
‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ শীর্ষক জনপলিসি চালু করবে সাধারণ বিমা কর্পোরেশন। থাকবে বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও জীবন নিয়ে আলোচনা সভা এবং দোয়া-মাহফিলের আয়োজন। এছাড়া পুষ্পস্তবক অর্পণ, র্যালি প্রদর্শন, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, শ্রদ্ধাঞ্জলি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশ, বঙ্গবন্ধু পদক প্রদান করবে সংস্থাটি।
জীবন বীমা
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১ মার্চ, ২০২০ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা স্কিম’ চালু করবে জীবন বীমা। জীবন বীমা টাওয়ারকে ‘বঙ্গবন্ধু জীবন বীমা টাওয়ার’ নামকরণ, আধুনিক প্রিমিয়াম কালেকশন বুথ ও সেবাকেন্দ্র স্থাপন করবে তারা।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক
‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’ প্রদান করবে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। এর সুবিধাভোগী বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য-সদস্যদের মেধাবী সন্তানদের জন্য বৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে এই বৃত্তি চালু করা হবে। এজন্য ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফার একটি নির্ধারিত অংশ থেকে এর তহবিল গঠন করা হবে। পাশাপাশি ব্যাংকের সুবিধাভোগীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে চালু করা হবে ‘বঙ্গবন্ধু ডিপোজিট স্কিম’।
কর্মসংস্থান ব্যাংক
অঞ্চলভিত্তিক তিনজন নিয়মিত ঋণ বা কিস্তি পরিশোধকারী সফল উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করবে কর্মসংস্থান ব্যাংক। এছাড়া বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমি, আইসিবি, বিআইসিএম, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১