ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশ কূটনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করেনি বা দেশটিকে স্বীকৃতিও দেয়নি। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য দেশটিতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশি পাসপোর্টের এই পরিবর্তনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিচালক গিলাদ কোহেন টুইট করেন, সেখানে তিনি ইসরায়েল ভ্রমণে বাংলাদেশিদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে সাধুবাদ জানান।বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। মূলত বাংলাদেশের ই-পাসপোর্টে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ অংশটুকুর অনুপস্থিতির কারণে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আসলে বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য ওই অংশটুকু তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা অপরিবর্তিতই থাকছে। ইসরায়েল ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান পরিবর্তন করেনি এবং এই দীর্ঘদিনের অবস্থানই ধরে রাখবে।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্টে এক সময় লেখা থাকত- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল, তাইওয়ান অ্যান্ড দ্য রিপাবলিক অব সাউথ আফ্রিকা’ কথাটি। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও তাইওয়ানের নামটি ওই নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ গেলেও ইসরায়েল থেকে যায়। দশককাল আগে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) চালুর পরও আগের মতো প্রথম পৃষ্ঠায়ই লেখাটি ছিল।
এখন ই-পাসপোর্টে আরো একটি পরিবর্তন এসেছে। নতুন এই পাসপোর্টে লেখা হচ্ছে শুধু- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’।
এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে কি ইসরায়েলের ভ্রমণের বিষয়ে নমনীয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। অবশেষে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই বিভ্রান্তির অবসান ঘটালো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা ও আল আকসা মসজিদে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার নিন্দাও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এতে ঢাকার অবস্থান জানিয়ে বলা হয়, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে জাতিসংঘ স্বীকৃত রেজোলুশনের আলোকে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এবং পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখার নীতিগত অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ।
এদিকে বাংলাদেশের নতুন পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ছাড়া বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’ বাক্যটি না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমকে রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিইনি। দেশটির প্রতি আমাদের অবস্থানেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মোমেন বলেন, ‘ইসরাইল সম্পর্কিত ওই শব্দগুলো পাসপোর্টে না থাকার অর্থ এই নয় যে, দেশটির প্রতি আমাদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছি। আমরা এখনো আমাদের আগের অবস্থানেই আছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক মান বজায় রাখতেই নতুন পাসপোর্টে এই পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের কোনো দেশের পাসপোর্টেই এ ধরনের শব্দ নেই।’ তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন পাসপোর্ট বই ইস্যু করার সময় প্রায় ছয় মাস আগেই বিশ্বের অনেক দেশের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
মোমেন আরো বলেন, জাতীয় পাসপোর্ট একটি দেশের নাগরিকের পরিচয় বহন করে। ওই দেশের পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে পাসপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই।
লেখাটা অপ্রয়োজনীয়, কূটনীতিতে পরিবর্তন নেই
এদিকে পাসপোর্টে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে আছে—কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। এটাই আমাদের ফরেন পলিসির মূল নীতি।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ১৮০টির মতো দেশ, এর মধ্যে একটি দেশের নাম লিখে বৈষম্য সৃষ্টি করা, এটা কি ঠিক? এটা লিখে হোস্টাইল (বিরোধ বা শত্রুতা) করার দরকার নেই তো। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের তো কোনো পরিবর্তন নেই। কেন আমি অযথা একটা কথা লিখে রাখতে যাব।’
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমাদের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মানও নিশ্চিত হবে। পৃথিবীর কোনো দেশের পাসপোর্টে এমন কিছু লেখা থাকে না। শুধু আমরা কেন আনন্যাসেসারি (অপ্রয়োজনীয়) লিখতে যাব। আমরা পছন্দ করি না সেটা এভাবে বলার দরকার নেই।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে বসতি গড়ে তোলা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বাংলাদেশ। এজন্য দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। তবে ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস রয়েছে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১