দেশে বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একটি। ঋণ কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর জানা যায়, নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে এবং এ সংখ্যা সহস্রাধিক। ওই সময় মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স, লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা, নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধিবিধানÑকোনো কিছুই মানা হয়নি। ফলে এ ব্যাংকে স্থান হয়নি যোগ্য ও মেধাবীদের।
২০১০ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত নিয়োগবিধি অনুসারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সব পর্যায়ে নিয়োগ দিয়ে আসছিল। এতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে এবং তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণেও ধরা পড়ে। স্বচ্ছতার জন্য ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে ব্যাংকার’স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে বিসিএসের আদলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা সমন্বিতভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে ‘সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রবিধানমালা, ২০১৬’ প্রণীত হয়। প্রবিধানমালা অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যেসব ব্যাংকের নিয়োগের আবেদনপত্র আহ্বান করা হবে, সেসব ব্যাংকের নাম পছন্দক্রমে উল্লেখ করতে হবে। নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদন করার সময় বিসিএসের মতোই পছন্দক্রম দিতে হবে। পরীক্ষা শেষে মেধাক্রম অনুসারে পছন্দসই ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হবে। বহুনির্বাচনী, লিখিত ও সাক্ষাৎকারের (ভাইভা) মাধ্যমে উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রবিধানমালা প্রণীত হওয়ার পর সবাই আশাবাদী ছিল, বাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ও পদোন্নতি হবে। এতে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু কতিপয় পদস্থ নির্বাহীদের কর্মকাণ্ডে তা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত অনুযায়ী, বিতর্কিতদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য রাতে ভাইভা নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এতে বলা হয়, বিতর্কিতদের পদোন্নতি দিতে সাত কর্মকর্তাকে ডাকা হয় ভাইভার জন্য। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল রাত ৭টা থেকে শুরু হয় ভাইভা, চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয় গতকাল। এদিন অনুষ্ঠেয় পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এটি হবে তার শেষ যোগদান। এ বৈঠকেই নিজের লোক বলে পরিচিতদের পদোন্নতি দিতে এই আয়োজন। ‘রাতে ভাইভা নেওয়া’ দোষণীয় নয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠায় পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চেয়ারম্যান এর ব্যাখ্যা দেবেন বলে আমরা আশা করি।
সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এটি তদন্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্ত চলাকালে তড়িঘড়ি করে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া ঠিক নয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না করে অবৈধ পন্থায় অযোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়া হলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘিত হবে। বিধিমালা যথানিয়মে যাতে পরিপালিত হয়, সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হতে হবে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১