ব্যাংকে ছাঁটাই আতঙ্ক নয়, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করুন

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২০-১১-২০ ০০:৪৮:২০

image

সম্প্রতি বিভিন্ন গনমাধ্যম থেকে জানা যায় কয়েকটি ব্যাংকে কর্মীদের ছাঁটাই আতঙ্ক শুরু হয়েছে। জানা যায়, করোনাকালীন ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করেছে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক। বিভিন্ন অজুহাতে অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের নানামুখী চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরাসরি চাকরি থেকে অব্যাহতি না দিলেও অনেককে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অনেক ভুক্তগোভী বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগও দায়ের করেছেন।

সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ব্যাংকটির একজন নির্বাহী। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। করোনাকালীন চাকরি হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত উক্ত নির্বাহী।

আরো অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ব্যাংকে ২৫ বছর চাকুরী পূর্ণ হলে আর্লি রিটায়ারমেন্টের সুযোগ থাকা সত্বেও অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাকে সে সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। পদত্যাগে বাধ্য করা ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকে নূন্যতম আর্থিক সুবিধা দিয়ে বিদায় করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এধরনের কার্যক্রমে ব্যাংক কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে এবং স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন ব্যাংকারা।

মহামারী চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েক শত কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করা হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক চুপি চুপি কর্মী ছাঁটাই করার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে একটি ব্যাংকের নারী ব্যাংক কর্মকর্তা উর্ধতন নির্বাহী দ্বারা হেনস্তার শীকার হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে, অনেক মেধাবী সরকারী চাকুরী ছেড়ে এমনকি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্বেও অধীক বেতন ভাতা ও নিয়মিত পদোন্নতীর আশায় বেসরকারী চাকুরীতে যোগদান করেছেন। তাদের যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো বেসরকারী ব্যাংকে আত্ননিয়োগ করেছেন। অনেকে চাকুরীতে সিনিয়র হয়ে এখন ছাঁটাইয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন।

ব্যাংকের উন্নয়নের জন্য ব্যাংক কর্মীদেরকে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদেরকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত রাখতে হবে।মুনাফা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগীতা থাকার প্রয়োজন আছে তবে তা নীতি নৈতিকতা সীমার মধ্যে থাকতে হবে।অনেক ব্যাংকের উর্ধতন নির্বাহীদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য নীচের কর্মকর্তাদেরকে বলী করা হয়। কর্মী ছাঁটাই সহ বিভিন্ন অমানবিক কার্যক্রম চালিয়ে অনেক ব্যাংকের এমডি মালিক পক্ষের নিকট নিজেকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে চান এ ধরনের অভিযোগও পাওয়া যায়।

করোনাকালীন সময়ে ব্যাংকের খরচ হ্রাস কমানোর বিভিন্ন কৌশল আছে যা অবলম্বন করা উচিত। এসময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের উপর অধীক জোর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেক ব্যাংক পরিচালকের নিজস্ব ভবনে চড়া ভাড়ায় ব্যাংকের অনেক শাখা রয়েছে। সেসব ভাড়া সমন্বয় করলে ব্যাংকের অনেক খরচ বেঁচে যাবে। আবার পরিচালকদের কাছে নামে–বেনামে ব্যাংকের অনেক টাকা আটকে আছে, সেগুলো ফেরত আনা গেলে ব্যাংকের কোনো লোকসানই হবে না।

আমরা আশা করি ব্যাংকগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের মত অমানবিক কার্যক্রম পরিহার করে বিকল্প পদ্ধতিতে খরচ হ্রাস করার কৌশল অবলম্বন করবে এবং ব্যাংকে সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ বজায় রাখবে।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১