উচ্চ রক্তচাপ : সচেতনতা এড়াতে পারে অকাল মৃত্যু

ডা. আয়শা আক্তার || ২০২১-০৫-২০ ২২:২৪:০১

image

হাইপারটেনশন মানে হলো উচ্চ রক্তচাপ (হাই ব্লাড প্রেসার)। রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকে প্রতি বছরই ৭০-৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অনেক সময়েই রোগের লক্ষণ বোঝা যায় না। আচমকাই বুকে ব্যথা, হৃদপিণ্ডে ধড়ফড়, তারপর সব শেষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসেবে পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ হাইপারটেনশন নিয়ে বেঁচে আছেন। তাই রক্তচাপ ঊর্ধ্বে উঠলে মানসিক চাপ বাড়িয়ে লাভ নেই, বরং সচেতনতাই হতে পারে এর প্রধান দাওয়াই।

করোনা কালে হাইপারটেনশন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ। তাই সতর্ক থাকতেই হবে। কিছু রোগীর মাথা ঘোড়া, হাল্কা শ্বাসের সমস্যার মতো উপসর্গ দেখা যায়। সামান্য পরিশ্রমে নিঃশ্বাসের কষ্ট ও বুক ধড়ফড় করে। হঠাৎ করেই রাগ হয়, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। অনেকেই এমন উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তাই অসুখ চট করে ধরা পড়ে না। কিন্তু লাগাতার অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ে জীবনযাপন করলে কিডনি, হার্টসহ বিভিন্ন অঙ্গ একে একে বিকল হতে শুরু করে। আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও। আচমকাই রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যেতে পারে, ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হতে পারে রোগীর।

আগে মনে করা হত ৪০ ঊর্ধ্বরাই হাইপারটেনশনে ভোগেন। এখন কমবয়সীদের মধ্যেও এই রোগ বাসা বেঁধেছে, যার কারণ খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। ১৮-৩০ বছর বয়সীদের ও ৪০ ঊর্ধ্বদের নিয়ম করে ব্লাড প্রেশার চেক করাতেই হবে। বছরে অন্তত একবার হেলথ চেকআপের সময় প্রেশার মাপিয়ে নেয়া ভালো।

উচ্চ রক্ত চাপের কারণ

হাইপারটেনশন তখনই হয়, যখন শরীরের রক্তজালকগুলোর মধ্যে চাপ বাড়ে। আমাদের হৃদপিণ্ড হলো পাম্পিং মেশিন। যে তার ছন্দে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়ে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। এ রক্ত শরীরের নানা কোষে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়ায় রক্তজালকের মাধ্যমে। কোনও কারণে যদি এই জালকের প্রাচীরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়, তখন হৃদপিণ্ড স্বাভাবিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না। তখনই বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি নানা লক্ষণ দেখা যায়। রক্তচাপ বিপদসীমা ছাড়ালে শরীরে অন্যান্য অঙ্গগুলো বিকল হতে শুরু করে।

ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপকে দুভাগে ভাগ করা হয়-অ্যাসেনশিয়াল আর সেকেন্ডারি। প্রাইমারি বা অ্যাসেনশিয়াল হাইপারটেনশন কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও ধরা যায়নি। দীর্ঘ বছর ধরে ধীরে ধীরে এ অবস্থা তৈরি হতে পারে। তবে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন—অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, কিডনির রোগ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার, থাইরয়েড ইত্যাদির কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে। তাছাড়া কয়েক রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন মাথা চাড়া দিতে পারে। নেশার জিনিস নিয়মিত খেলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন হলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

উচ্চ রক্তচাপ একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এটি ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তবে এটি নিরাময় করা যায় না। সুতরাং, রোগীদের চিকিত্সা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে চিকিত্সা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সাধারণত জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত মেডিকেল ফলোআপে থাকতে হবে। কিন্তু যদি মানুষ আগেই প্রতিরোধ করতে পারে নিয়ম মাফিক জীবন চালিয়ে যেতে পারে তাহলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

এছাড়া খাবার নিয়ন্ত্রণ করুন, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ডায়েট গ্রহণ, ডায়েটে সোডিয়াম হ্রাস, অ্যালকোহল সীমাবদ্ধ সম্ভব হলে পরিহার, ধুমপান ত্যাগ এবং চাপ হ্রাস করুন।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে কারা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রেস এবং পারিবারিক ইতিহাস (পরিবার থেকে পাওয়া) । এছাড়া অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা, শারীরিকভাবে সক্রিয় না হওয়া, তামাক ব্যবহার, ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণকারীরা বেশি ঝুকিতে থাকেন।

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপের সর্বাধিক ঝুকিতে থাকেন- ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস রোগী, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের অপর্যাপ্ত, ভিটামিন ডি এর অভাব, স্ট্রেস, বার্ধক্যজনিত, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী।

লেখক : সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকা

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১