করোনার প্রভাবে আবার ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ধস

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০৪-২২ ২১:২১:৩৪

image

করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না যাওয়ায় আবার কমছে ব্যাংকের ঋণ আদায়। গত বছর করোনার সময়ে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেছেন, তাদের একটি অংশ হিমশিম খাচ্ছে। তবে কেউ কেউ পরিস্থিতির সুযোগও নিচ্ছেন। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে নগদ টাকার সংকটে পড়বে ব্যাংকগুলো। এবারের ধাক্কা ব্যাংক খাতকে আরও চাপে ফেলবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।

ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছর ঋণ আদায় ভালো হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ছাড়ের কারণে কেউ ঋণ ফেরত না দিলেও খেলাপি করতে হয়নি। আদায় না হওয়া ঋণের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে গেছে, যা 'ডেফারেল' সুবিধা হিসেবে বিবেচিত। বিপুল অঙ্কের ঋণ ডেফারেল সুবিধার আওতায় থাকায় আদায় কমলেও কাগুজে মুনাফা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে অধিকাংশ ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী ভালো দেখানো গেছে। এ অবস্থা সাময়িক স্বস্তিদায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ডেফারেল সুবিধার আওতায় ছিল দুই লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে দুই লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে কোনো কিস্তি পরিশোধ হয়নি। আর ৩৬ হাজার ৭১১ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে আংশিক কিস্তি পেয়েছে ব্যাংক। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ব্যাংকগুলোর আদায় কমেছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। আদায় কমলে সাধারণভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কথা। তবে নতুন করে কাউকে খেলাপি না করায় গত বছর পাঁচ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা কমে গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকায় নেমেছে। মোট ঋণের যা মাত্র ৮ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এ হার গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এসব অনাদায়ী ঋণ চলতি বছরে আদায় হবে বলে আশায় ছিল ব্যাংকগুলো।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবার ঋণ আদায় হচ্ছে না বললেই চলে। প্রথমত, এখন গ্রাহকদের কাছে যাওয়া যাচ্ছে না। কোনোভাবে তাদের কাছে পৌঁছালেও বলছেন সব বন্ধ। বিক্রি নেই বলে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এমন অবস্থা ব্যাংকগুলোর জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে করেন, আয় থাকা গ্রাহকদের থেকে ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকারদের এ সময়ে ফোন ও ই-মেইলে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আজম বলেন, খাদ্য ও ওষুধের বাইরে এখন মানুষের চাহিদা কমে গেছে। এর মধ্যে লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ। ফলে এ সময়ে ব্যাংকের টাকা আদায় হওয়া খুব কঠিন। ঋণ আদায় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এই পরিস্থিতির উন্নয়নে নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে। তিনি জানান, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের আয় ব্যাংকের মাধ্যমেই আসে। ফলে এখানে আদায়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে। ঠিকাদারদের বিলও ব্যাংকে জমা হওয়ায় সে ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। তবে তাদেরও যদি আয় কমে যায়, স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়বে।

শাখা পর্যায়ের কয়েকজন ব্যাংকার জানান, করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের চাহিদা কমেছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার সময় দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবারও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যারা ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখেন, তাদের একটি অংশ এবার আরও চাপে পড়ে গেছে। অথচ করোনার প্রথম প্রকোপ শুরুর পর ব্যবসা খারাপ গেলেও ধারদেনা করে হলেও এই শ্রেণি নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেছে। কেউ কেউ অন্য সম্পদ বিক্রি কিংবা গচ্ছিত টাকা দিয়ে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করেছেন। তবে এবার তাদের জন্য এসব বিকল্প সংকুচিত হয়ে পড়েছে। করোনার ঢেউ দীর্ঘায়িত হলে এই শ্রেণির ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কিনা, সেটাই ব্যাংকের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তাদের মতে, প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী আছে, যারা বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করেও নানা উপায়ে খেলাপিমুক্ত থাকে। ব্যাংকের টাকা না দিতে সব সময় তারা ছুতো খোঁজে। বর্তমানে এ ধরনের গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সম্ভাবনা কম।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১