বাংলাদেশে আপাতত কোনো ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা ভার্চুয়াল কারেন্সি বাজারে ছাড়বে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের মুদ্রা বাজারে ছাড়ার অনুমোদনও দেবে না। এমন কী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধরনের মুদ্রার প্রচলন ঘটালে বা ঘটানোর চেষ্টা করলে অথবা লেনদেন করলে তাদের প্রচলিত আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলমান ডিজিটাল মুদ্রা বাংলাদেশে লেনদেনের বিষয়ে কথা উঠলে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে ডিজিটাল মুদ্রার বিকল্প হিসাবে দেশে চলমান ব্যাংক নোটগুলোর অনলাইনভিত্তিক (প্লাস্টিক মানি বা ইলেকট্রনিক মানি) লেনদেন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়। একই সঙ্গে নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, এতে মুদ্রা জাল করার প্রবণতা কমে যাবে এবং নোট ছাপানো, ব্যবস্থাপনা ও স্থানান্তরের খরচ কমে যাবে। একই সঙ্গে কমবে ব্যাংকগুলোর নোট ব্যবস্থাপনার চাপ।
জানা গেছে, ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই, নেই লেনদেনের কোনো গ্যারান্টি, নিয়ন্ত্রণের জন্য নেই কোনো কর্তৃপক্ষ, মুদ্রা খোয়া গেলে বা দরপতন ঘটলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের চাহিদা এখন তুঙ্গে। হু-হু করে বাড়ছে দাম। ২০০৯ সালে মুদ্রাটির যাত্রার শুরুতে প্রতি বিটকয়েনের দাম ছিল এক ডলার বা ৭৯ টাকার নিচে। ১২ এপ্রিল এর দাম সর্বোচ্চ বেড়ে প্রায় ৯৪ লাখ টাকায় উঠেছিল। ১৯ এপ্রিল আবার কমে ৪৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিটকয়েন কেনাবেচা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও থেমে নেই এর লেনদেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর ব্যবসা বেআইনিভাবে বাংলাদেশেও প্রসারিত হচ্ছে। আবার প্রতারণার ঘটনাও ঘটছে। বিদেশে কেনা পণ্যের দাম যেমন বিটকয়েনের পরিশোধ করা হচ্ছে, তেমনি এতে বিনিয়োগ হচ্ছে। বেআইনি এ মুদ্রা নিয়ে ব্যবসা করার দায়ে ইতোমধ্যে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে কয়েকটি মামলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সরকারের ই-গভর্মেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, বিটকয়েন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়ায় বৈধভাবে এর লেনদেন করার সুযোগ নেই। তবে বিদেশে যাদের অ্যাকাউন্ট আছে বা আত্মীয়স্বজন রয়েছে তাদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ মুদ্রা কেনাবেচা করছে। যেহেতু অনেক দেশে এটি লেনদেন করতে কোনো বাধা নেই, সে কারণে বিদেশের অ্যাকাউন্টে লেনদেন করলে কিছু করার থাকে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পার্শ^বর্তী কোনো দেশ ডিজিটাল মুদ্রা এখনও চালু করেনি। উন্নত দেশগুলোর কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ মুদ্রার স্বীকৃতি দেয়নি। সে অবস্থায় বাংলাদেশে এ ধরনের মুদ্রা চালু বা লেনদেনের অনুমতি দেয়া হবে না। প্রতিযোগী দেশগুলো এ ধরনের মুদ্রা চালু করলে তার ফলাফল দেখে পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিডিটাল লেনদেন জ্যামিতিক হারে বাড়ার কারণে বিহিত মুদ্রার (ব্যাংক নোট) ব্যবহার কমছে। ফলে সাধারণ জনগণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডিজিটাল মুদ্রা সরবরাহের সমাভাবনা তৈরি করছে। সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা (সিবিডিসি) ব্যবহারের পুরোভাগে রয়েছে। সিবিডিসি স্কিমকে বর্তমানের ব্যাংকনোটের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর একটি দাবি।
সূত্র জানায়, দেশে এখন মোট লেনদেনের প্রায় ৪০ শতাংশ ইলেকট্রনিক মানি পদ্ধতিতে হয়। একে আরও শক্তিশালী করতে গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কার্ড, পস মেশিন, অনলাইনে দেনা-পাওনা পরিশোধ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করতে হবে। সে লক্ষ্যে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার জন্য ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আর্থিক খাতের ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১