গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সুদবিহীন সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৩৫৭ জন ভিক্ষুক। কোনো ভিক্ষুক যেন অপমানবোধ না করেন, সেজন্য তাদের সম্মানসূচক নামও রেখেছে ব্যাংক। ব্যাংকের ভাষায়-এরা সবাই সংগ্রামী সদস্য। গত ১৮ বছরে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়েছেন ২১ হাজার ৩৮৩ জন সংগ্রামী সদস্য। আর ৯ হাজার ৩১ জন হয়েছেন ভিক্ষুক থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরিবের ব্যাংক নামে পরিচিত গ্রামীণ ব্যাংক ভিক্ষুক সমাজের প্রতি যে সম্মান দেখিয়েছে- তা বিরল। এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিতে পারে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ উদ্যোগ সফল হলে দেশ থেকে উঠে যাবে ভিক্ষাবৃত্তি। তখন আজকের ভিক্ষুকরাই গড়ে উঠবেন একেকজন ছোট ছোট নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক তত্ত্বাবধান এবং নিখুঁত পরিচর্যা।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সালের জুলাই থেকে সংগ্রামী সদস্য (ভিক্ষুক) কর্মসূচি কার্যক্রম চালু করা হয়। ভিক্ষুকদের খুঁজে যে শাখার আওতাধীন এলাকায় পাওয়া যায় সে শাখায় সংগ্রামী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কোনো সংগ্রামী সদস্য মৃত্যুবরণ করলে তাকে ঋণ পূর্ণপরিশোধ করতে হয় না বরং তার দাফন-কাফনের জন্য ১ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ বলেন, করোনা মহামারির দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তা হিসাবে ২০ হাজার ৫৯২ জন সংগ্রামী সদস্যকে (ভিক্ষুক) ত্রাণসামগ্রী (চাল, ডাল, আলু, লবণ ও সয়াবিন তেল) ও নগদ টাকাসহ ১০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এটা একটা নতুন এবং মানবিক কর্মসূচি। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সংগ্রামী সদস্যরা ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন। এর মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি পাচ্ছেন তারা।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল খায়ের মো. মনিরুল হক বলেন, প্রথমে তাদের ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি যে কোনো ছোটখাটো উদ্যোগ বা ফেরি ব্যবসা করতে সহায়তা করা হয়।
এ ক্ষেত্রে চুড়ি, ফিতা, পান-সুপারি বিক্রি, আচার, জ্যাম, জেলি, পাপর, চিপস, চানাচুর, চকোলেট, পাউরুটি বিক্রির জন্য প্রত্যেক সদস্যকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এই ঋণের কোনো সুদ নেওয়া হয় না এবং পরিশোধের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যখন ইচ্ছা, যত টাকা ইচ্ছা তত টাকা সাপ্তাহিক সভায় পরিশোধ করতে পারেন।
অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে ভিক্ষাবৃত্তি ও ফেরি ব্যবসায় যা লাভ আসে তা থেকে নিজের সংসার চালানোর পর যা থাকে তা নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কিস্তি দিতে পারেন। যখন ঋণ পরিশোধ হবে তারপর আবার টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করে ঋণ নিতে পারেন।
এভাবে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের পর যখন সংশ্লিষ্ট সংগ্রামী সদস্যের সংসারে উন্নতি হয় এবং ভিক্ষা করার প্রয়োজন হয় না তখন সংশ্লিষ্ট সংগ্রামী সদস্য মূল ধারায় অর্থাৎ ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংগ্রামী সদস্যদের ঋণ সহায়তা প্রদান করে ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সম্মানের জীবনধারায় ফিরিয়ে আনা।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১