ঋণখেলাপির সংজ্ঞা আরও কঠোর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গ্রাহকের নিজ নামে বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের পাশাপাশি বেনামি বা ভুয়া কিংবা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিলে তার দায়ও বহন করতে হবে।
আর কোনোক্রমেই মূল ঋণ বা আসল মওকুফ করা যাবে না। ইচ্ছামতো করা যাবে না সুদ মওকুফও। এক্ষেত্রে থাকবে বিধিনিষেধ। শুধু তাই নয়, তিন মাসের বেশি মেয়াদে নিয়োগ করা যাবে না বিকল্প পরিচালক।
তবে পরিচালকদের পরিবারের সংজ্ঞায় আনা হচ্ছে শিথিলতা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া কেউ ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না।
ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে এসব বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধিত খসড়া থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খসড়াটি বর্তমানে অর্থ, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে রয়েছে। কমিটি এটি চূড়ান্ত করলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
আইনের খসড়ায় ঋণখেলাপির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, নিজের বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের দায় গ্রাহককে বহন করতেই হবে।
এর বাইরে বেনামে বা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা বা এর অংশ বা এর সুদ বা মুনাফা গ্রাহকের সামর্থ্য থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধ না করলে তিনি ঋণখেলাপি বলে গণ্য হবেন।
এতে আরও বলা হয়, ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত জামানত ব্যাংকের লিখিত অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর বা স্থানান্তর করা যাবে না। এরপরও জামানত ব্যাংকের অজান্তে হস্তান্তর করলে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ না করলে তিনি খেলাপি বলে গণ্য হবেন।
সূত্র জানায়, প্রচলিত আইনে গ্রাহক নিজ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের দায় গ্রাহককে বহন করতে হয়। বেনামি বা ভুয়া ঋণের দায় বহন করতে হয় না।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যদি কোনো গ্রাহকের বেনামি বা ভুয়া ঋণ উদঘাটিত হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সন্দেহাতীতভাবে মনে করে ওই ঋণ গ্রাহকেরই।
এর দায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নামে দেখানোর জন্য ব্যাংককে নির্দেশ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই ভুয়া বা বেনামি ঋণের দায় গ্রাহককে বহন করতে হয়। এসব ঋণ খেলাপি হলে তখন গ্রাহকও খেলাপি হন।
সংশোধিত আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ছাড়াই শুধু ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে শনাক্ত হলেই এর দায় সরাসরি গ্রাহকের ওপর পড়বে।
একই সঙ্গে জালজালিয়াতি করে ভুয়া বা বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়ার দায়ে গ্রাহককে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এই ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও দায়ী হতে হবে।
বর্তমান আইনে জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দায়ী করা হতো না।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনে কঠোর বিধান রাখা হলেও পরে সার্কুলার জারির মাধ্যমে শিথিলতা আনা হয়। এটি ঠিক নয়। যে কারণে আইনের সঠিক প্রয়োগ আর থাকে না।
আইনের প্রয়োগ সমানভাবে করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। এটি ছাড়া ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরবে না। সুশাসন না এলে কমবে না জালজালিয়াতি।
প্রচলিত মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী বেনামি বা ভুয়া হিসাব খোলার কোনো সুযোগ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেওয়ারও সুযোগ নেই।
সংশোধিত আইনে ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়ন আইনকেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। ফলে এ ধরনের অপরাধ ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে ওই দুই আইনেও সরাসরি বিচার করা যাবে।
বর্তমানে এ ধরনের অপরাধকে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়নকে বিচার করতে হলে আলাদা তদন্তের প্রয়োজন হয়। নতুন আইনে আলাদা তদন্তের প্রয়োজন হবে না। তবে সিকিউরিটিজ কাস্টোডিয়ান সার্ভিসের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না। ব্যাংক কোম্পানি মনে হতে পারে এমন শব্দও ব্যবহার করতে পারবে না।
ব্যবহার করলে কোম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ৭ বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এই আইন লংঘন চলতে থাকলে প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।
কোনো ব্যাংক অন্য ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য শেয়ারের ধারক হতে পারবে না। আইন কার্যকরের আগে হয়ে থাকলে এক বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ রেখে বাকি শেয়ার হস্তান্তর করতে হবে। বর্তমান আইনে ১০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার ধারণ করতে পারে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১