করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়নি। এ জন্য বাড়তি কোনো নিরাপত্তা সঞ্চিতিও রাখার প্রয়োজন পড়েনি। এরপরও গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি ১০ ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে।
ব্যাংক সাধারণত গ্রাহক থেকে আমানত নিয়ে ঋণ প্রদান করে। সেই ঋণ খারাপ হয়ে গেলে সেই অনুপাতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তাতে ব্যর্থ হলে মূলধনের ওপর চাপ পড়ে। খারাপ ঋণের ওপর অতিরিক্ত মূলধন রাখার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
মূলধন ঘাটতিতে থাকা ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক, সাবেক ফারমার্স বা পদ্মা ব্যাংক।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারির পর এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। আর সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বেশি সুদে তহবিল নিয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়ার কারণে ঘাটতিতে পড়েছে, ঋণে অনিয়মও হয়েছে। আবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত জুন শেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, কৃষি ব্যাংকের তহবিল খরচের চেয়ে সুদহার কম। এ জন্য মূলধন ঘাটতিতে আছে। সরকার থেকে তহবিল না পেলে শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়।
গত জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ২ কোটি টাকা। জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১৫৯ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৬৭১ কোটি টাকা; আর সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, ডিসেম্বর শেষে তা কিছুটা কমে হয়েছে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ঘাটতি ডিসেম্বর শেষেও ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা রয়ে গেছে। এ ছাড়া সাবেক ফারমার্স বা বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩০৯ কোটি টাকা, গত জুনে যা ছিল ২০ কোটি টাকা। যাত্রা শুরুর পর বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতির কারণে ব্যাংকটি ঘাটতিতে রয়েছে।
জানা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ১০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে থাকলেও পুরো খাতে মূলধন উদ্বৃত্ত ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ খেলাপি। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৪২ হাজার ২৯২ কোটি টাকা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১