সময় ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। এর কারণে হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসসহ অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। কমন কোল্ডের মধ্যে এটি অন্যতম
শীত চলে গিয়ে কোকিলের কুহুতানে প্রকৃতিতে আগমন ঘটেছে ঋতুরাজ বসন্তের। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টাতে স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে, বেড়ে যায় কিছু রোগের প্রকোপ। বসন্তে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের পরাগ রেণু, যা অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা বা হাঁপানির অন্যতম কারণ এই পরাগ রেণু। তা ছাড়া এ সময় ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। এর কারণে হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিসসহ অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপও বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। কমন কোল্ডের মধ্যে এটি অন্যতম। এর ফলে সর্দি, নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, শুকনা কাশি বা জ্বর হতে পারে। সাধারণত এসব উপসর্গ সারাতে অ্যান্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। সেই সঙ্গে আদা-লেবুর চা, মধু-তুলসী খেলে, কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করলে আরাম মিলবে। তবে কফ বা সর্দি হলুদ বা সবুজাভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শীতের প্রকোপ কমে গিয়ে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ে বলে এই সময়টাতে অনেকে আইসক্রিম বা কোল্ডড্রিংকস বেশি খান। সেই সঙ্গে শুস্ক ধুলাবালির প্রভাবে হতে পারে টনসিলাইটিস, সাইনোসাইটিস। সাইনোসাইটিসের কারণে কপাল, ভ্রুর নিচের অংশ, নাকের আশপাশে ও মুখমণ্ডলের একপাশে ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ও সঙ্গে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়া গরম পানিতে মেনথল দিয়ে নাক দিয়ে ভাঁপ নিলে উপকার পাওয়া যায়।
তবে সমস্যা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। দীর্ঘমমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের অসুখ যেমন হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসের প্রকোপ বাড়তে দেখা যায় এই সময়। বসন্ত নামটি অঙ্গে ধারণ করে বলেই কি এ সময় জলবসন্তের প্রকোপ দেখা যায়? এতে জ্বর-সর্দির সঙ্গে গায়ে ফোসকার মতো ছোট ছোট দানা ও চুলকানি থাকে।
সাধারণত সংক্রমণ না হলে প্যারাসিটামল ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সেবনেই উপকার মিলবে। এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে রোগীকে অবশ্যই পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত রুমে আলাদা রাখতে হবে। তার বিছানাপত্র নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। শরীরের ফুসকুড়ি পুরোপুরি শুকানো এবং ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ রোগীকে এভাবে আলাদা রাখাটাই শ্রেয়। এ সময়ে দিনের বেলা কিছুটা গরম পড়ে বলে অনেকেই পিপাসার্ত হলে পথেঘাটে শরবত বা আখের রস খান। ফলে বাড়ে ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। তাই বাইরের শরবত, পানীয়, আখের রস, কাটা ফল খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করুন। প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় বোতলে করে ফুটানো পানি নিয়ে বের হবেন।
যদিও করোনার টিকা বাজারে এসেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে এসেছে। তারপরও আমাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। কারণ এই টিকা এখন পর্যন্ত শতভাগ কার্যকরী রূপে প্রমাণিত হয়নি। এই সময়টাতে সুস্থ থাকতে হলে তাই ধুলাবালি থেকে দূরে থাকুন। বাইরে বের হলে অবশ্যই যথাযথ নিয়মে মাস্ক পরুন। কাজের প্রয়োজন ব্যতিরেকে জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলুন। বয়স্ক মানুষ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, হাঁপানিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রয়োজন না হলে বাসাতেই অবস্থান করুন। সন্দেহজনক সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। আর প্রতিদিন টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। অতিরিক্ত গরম এড়িয়ে চলতে হবে।
ঘাম হলে শরীর মুছে ফেলুন। সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। যেখানে সেখানে দূষিত পানি বা অন্যান্য পানীয় পান করা যাবে না। বাসগৃহ ও আশপাশের পরিবেশ পরিস্কার রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখুন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে চলুন। যেখানে-সেখানে কফ-থুতু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রেণে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরকে কোনো ওষুধের পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না। আর অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকুন।
[কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা]
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১