মহামারি করোনার মাঝেও সবচেয়ে উজ্জীবিত ছিল দেশের শেয়ার বাজার। আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে এই একটি খাত দীর্ঘদিনের বদনাম ঘুচিয়ে সুনাম অর্জন করে। বিশেষ করে জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর থেকেই শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। বিনিয়োগকারীদের মাঝেও আস্থা ফিরে আসে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) বাজার মূলধন একসময় ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু গত দেড়মাস ধরে শেয়ার বাজার গতিহীন। গেল ছয় সপ্তাহের টানা পতনের মাঝে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা।
শুধু তাই নয়,টানা পাঁচ সপ্তাহের পতনে ডিএসই ৩৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারানোর পর গেল সপ্তাহে এক হাজার ২৯৭ কোটি টাকা বেড়েছে। এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীদেরকে বাজারের প্রতি আস্থা ফেরানোর পাশাপাশি বাজারকে গতিশীল করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন শেয়ার বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু উদ্যোগের কারণে শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বিনিয়োগকারীরাও বাজারের প্রতি আস্থা রাখতে শুরু করেছিল। সেই আস্থা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।’ এক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠান যাতে শেয়ার বাজারের প্রতি আগ্রহী হয়, সেই ধরনের উদ্যোগ বেশি বেশি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পতনের মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ার বাজার। এ নিয়ে টানা ছয় সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার। টানা এই দরপতনের মধ্যে পড়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। অবশ্য পতনের মাঝেও গত সপ্তাহে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বেড়েছে।
তথ্য বলছে, বাজার মূলধন হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গেল সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ১ শতাংশের ওপরে। আর লেনদেন কমেছে ৩৪ শতাংশের ওপরে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে এক হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল চার হাজার ৫২ কোটি টাকা। তার আগের চার সপ্তাহে কমেছিল যথাক্রমে— ৯ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা, চার হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা এবং ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের টানা পতনের মধ্যে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৩৪ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫৯ দশমিক ৬০ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৯ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট। তার আগের চার সপ্তাহে কমেছিল ১৬২ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ ছয় সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৪৯৩ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকরে পাশাপাশি টানা ছয় সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৩৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট । আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছিল ৫ দশমিক ১২ পয়েন্ট। তার আগের চার সপ্তাহে কমেছিল ৬৩ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট।
অপরদিকে, ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও টানা চার সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে এই সূচকটি আবারও পতনের মধ্যে পড়েছে। গেল সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ১৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৬ দশমিক ১৬ পয়েন্ট।
তার আগের চার সপ্তাহে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এই সূচকটি কমেছিল ২৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট
সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হলেও গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে প্রায় তার সমান সংখ্যক। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১২১টি প্রতিষ্ঠান। দাম কমেছে ১২৬টির। আর ১১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩০৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় চার হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে দুই হাজার ১০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১