জরুরি পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু কয়েকটি ব্যাংকে যোগাযোগ করলেও ব্যাংকগুলো অপারগতা প্রকাশ করছে। আবার ব্যবসা চালু রাখতে পণ্য আমদানি করতেই হবে। এ নিয়ে চিন্তিত আছেন তিনি। কথাগুলো বলেছেন জনৈক ব্যবসায়ী।
ব্যাংকারোা জানিয়েছেন, ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। কিন্তু ওই হারে সরবরাহ নেই। এ কারণে ডলারের অভাবে এলসির দায় মেটাতে পারছেন না। বাজার থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনে এলসি নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। গতকালও বাজার থেকে ৯৭ টাকা থেকে ৯৮ টাকা মূল্যে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান না করে তাই পণ্য আমদানির জন্য নতুন করে এলসি খুলতে পারছেন না তারা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পণ্যের মূল্য ও সরবরাহের ওপর। এমনিতেই ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ওপর নতুন এলসি খোলার ধীরগতিতে পণ্যের সরবরাহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন যাবত প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করতে না পেরে বেশির ভাগ পণ্যের এলসি নিষ্পত্তি করতে পারেননি। যে কয়েকটি করেছেন তাও আবার উচ্চমূল্যে ডলার কিনে। গতকালও ৯৮ টাকা মূল্যে ডলার কিনে এলসির দায় নিষ্পত্তি করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক আসছেন পণ্য আমদানিতে এলসি খুলতে। কিন্তু সামনের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ, ডলারের চাহিদা যে হারে বাড়ছে ওই হারে সরবরাহ বাড়ছে না। এমনিতেই বিদ্যমান এলসির দাম মেটাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। নতুন করে চাপ বাড়াতে অনেকটা ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কত মূল্যে ডলার কিনে এলসির দাম নিষ্পত্তি করেছেন, এ বিষয়ে তিনি শুধু ৯৮ টাকা জানিয়েছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
গতকাল ব্যাংকগুলো পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলার নির্ধারণ করেছিল ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা, যা নিজস্ব ডলারের সংস্থানের মাধ্যমে নিজ ব্যাংকের পণ্য আমদানির দায় মিটিয়েছেন। এ মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে। তবে, আন্তঃব্যাংকে এর চেয়ে বেশি মূল্যে লেনদেন হয়েছে বলে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের মতো ব্যাংকগুলো নতুন এলসি খুলছে না। কোনো কোনো গ্রাহক একাধিক ব্যাংকেও ঘুরছেন। এক ব্যাংক থেকে বিমুখ হয়ে অন্য ব্যাংকে যাচ্ছেন। কিন্তুব্যাংকগুলো থেকে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এলসি খুলতে না পারায় সামনে পণ্যের সরবরাহের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এমনিতেই টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ইতোমধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে আমদানিনির্ভর পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। এখন নতুন করে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারায় সামনে বর্ধিত দামের সাথে এলসির সরবরাহেও বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এমনি পরিস্থিতিতে পণ্য সরবরাহের চেইন ঠিক রাখার জন্য এলসি খোলার নীতিমালায় কঠোরতা তুলে দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা প্রয়োজন। একই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত হারে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী কয়েকদিন ডলার সরবরাহ করলে ব্যাংকগুলোর মাঝে ডলার সঙ্কট কেটে যাবে। এতে কোনো ব্যাংক জিম্মি করে ডলারের দাম বাড়াতে পারবে না। পাশাপাশি যথাসময়ে রফতানি আয় দেশে আনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরো কঠোরতা আরোপ করতে হবে। একই সাথে আন্ডার ইনভয়েজিং ও ওভার ইনভয়েজিংয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানির আড়ালে টাকা পাচার হচ্ছে কী না সে বিষয়ে তদারকি আরো জোরদার করতে হবে। আর তা হলে স্থানীয় বাজারে ডলার সঙ্কট কেটে যাবে বলে তারা মনে করছেন।