ঢাকা শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
আবাসনঃ স্বল্প আয়ের মানুষের স্বপ্ন
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২০-১১-২৪ ২১:৩০:৩০
.

দিন শেষে সবাই চায় নিরাপদ আবাসন। উচ্চবিত্তরা সহজে বাসস্থানের সংস্থান করলেও এখনো তা অনেক মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র, অতিদরিদ্র ও বস্তিবাসীদের অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত। এর কারণ জমি ও ফ্ল্যাটের উচ্চ দাম, নির্মাণ ব্যয় এবং নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়া।

দেশের আবাসন খাতটি গড়ে উঠেছে মূলত সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকার কাঠামো পরিকল্পনার (খসড়া) অনুযায়ী, ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মোট আবাসের মাত্র ৭ শতাংশের জোগান দিয়েছে সরকার। ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ি ব্যক্তি উদ্যোগে বানানো হয়েছে। বাকি ৪১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভবন তৈরি করেছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।

আবাসন খাতে সরকারের অংশগ্রহণ কম থাকা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জমি ও ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে হু-হু করে। আবাসন ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে গত ১৮ বছরে ফ্ল্যাটের দাম ৪ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এর চেয়েও বেশি বেড়েছে জমির দাম। এ ছাড়া ফ্ল্যাট ও প্লটের উচ্চ নিবন্ধন ফির সংস্থান করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না স্বল্প আয়ের মানুষ।

গত ১৩ জুন চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘দেশের আবাসন খাত দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। খাতটি বিকশিত না হওয়ার অন্যতম কারণ স্ট্যাম্প ডিউটি ও রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আর অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণও বাড়ছে। আমরা এসব ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

আবাসন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ফ্ল্যাট নিবন্ধনে ৪ শতাংশ গেইন ট্যাক্স, ৩ শতাংশ স্ট্যাম্প ফি, ২ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ২ শতাংশ স্থানীয় সরকার কর ও ৩ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) লাগে। তাঁদের প্রস্তাব অনুযায়ী, গত মে মাসে স্ট্যাম্প ফি ৩ শতাংশ থেকে দেড় শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ফি ২ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে আইন ও বিচার বিভাগে; স্থানীয় সরকার কর ২ থেকে দেড় শতাংশ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ভূমি উন্নয়ন সংস্থার মূসক ৩ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে মূসক নীতি বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন হয়নি।

এর আগে সব মানুষের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালা-২০১৬’ প্রণয়ন করেছিল সরকার। কিন্তু সেই নীতিমালাও যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। এই নীতিমালায় জমির মূল্য, গৃহনির্মাণ ব্যয়, বাড়িভাড়া ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য গৃহায়ণে উৎসাহিত করা, গৃহায়ণ কার্যক্রমে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার পরিধি বাড়ানো এবং পুরোনো বাড়ি মেরামতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, দেশের বর্তমান আবাসনব্যবস্থায় উচ্চবিত্তরাই বেশি সুবিধা পান। স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য সরকারকে এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ঋণ নিয়ে মাসে ১৬-২০ হাজার টাকা করে কিস্তি দিয়ে ৩০ বছরে কেউ বাড়ির মালিক হতে পারেন। আর যাঁরা গৃহহীন আছেন, তাঁদের ঋণ দিয়ে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাঁদের জন্য সরকারকে প্রকল্প নিয়ে স্বল্প মূল্যে বা বিনা মূল্যে গৃহের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, মৌলিক চাহিদার বিবেচনায় খাদ্যের পরই বাসস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ই-কমার্সের পণ্য না পেলে টাকা পরিশোধ নয়
সরকারি কর্মকর্তাদের গৃহঋণে যুক্ত হলো ৫ ব্যাংক
আবাসন খাতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ