শীর্ষস্থানীয় ৫টি পদে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়নি। অথচ মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের বেতন-ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে তার নিয়োগ নবায়নের আবেদন করেছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। গত ২২ সেপ্টেম্বর বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে এ আবেদন করা হয়েছে। তবে বেতন-ভাতা বাড়ানোর এ প্রস্তাব কতটা যৌক্তিক তা যাচাই করে দেখছে বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর প্রথমবারের মতো ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আদিবা রহমান। সে সময় তার বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে আদিবা রহমানের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা ৭৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান এবং কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালক সুরাইয়া রহমানের মেয়ে আদিবা রহমান। এ ছাড়াও আদিবা রহমান কোম্পানিটির পরিচালক যিয়াদ রহমান, সাইকা রহমান ও অনিকা রহমানের বোন।
বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করাটাই স্বাভাবিক। তবে কোম্পানির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির মধ্যে একটি সামঞ্জস্যতা থাকা প্রয়োজন। হঠাৎ করেই একজনের বেতন-ভাতা পঁচাত্তর শতাংশ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
বিধান অনুসারে, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাসমূহ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে উক্ত কোম্পানির আর্থিক অবস্থা, কাজের পরিধি, ব্যবসার পরিমাণ এবং উপার্জন ক্ষমতা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা, বয়স ও অভিজ্ঞতা এবং সমমানের বীমা কোম্পানিতে অনুরূপ পদে বহাল ব্যক্তিকে প্রদত্ত পারিতোষিকের পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে।
এ ছাড়াও মোট বেতন, মূল বেতন, বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য ভাতাদি (ভবিষ্যৎ তহবিল, ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি) সমন্বয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য সুবিধাদি যেমন- গাড়ি, জ্বালানী, চালক, ইউটিলিটি বিল, ছুটি, পরিবহন সহায়তা, ইত্যাদির পরিমাণ বা সীমা নির্দিষ্ট থাকতে হবে এবং অন্যান্য সুবিধাসমূহ যতদূর সম্ভব আর্থিক মানদণ্ডে নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য অনুসারে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর অনলাইন মাধ্যমে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২৪৭তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের নিয়োগ নবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০২০ সালের ১ নভেম্বর থেকে আগামী তিন বছরের জন্য তাকে মাসে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। যার অনুমোদনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষে আবেদন করা হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর।
নতুন চুক্তি অনুসারে আদিবা রহমানের মাসিক মূল বেতন ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫০ টাকা, বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ৫২ হাজার ৫শ’ টাকা, বিনোদন ভাতা ৩৫ হাজার টাকা, মেডিকেল ভাতা ২৬ হাজার ২৫০ টাকা এবং প্রযুক্তিগত ভাতা ৫২ হাজার ৫শ’ টাকা। সর্বমোট ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এর আগে ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আদিবা রহমানের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ৩০ হাজার টাকা, বিনোদন ভাতা ২০ হাজার টাকা, মেডিকেল ভাতা ১৫ হাজার টাকা এবং প্রযুক্তিগত ভাতা ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে তার বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা ৭৫ শতাংশ।
এদিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও’র বেতন-ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হলেও বীমা কোম্পানিটির সিএমও, ডিএমডি, ইডি ও এসইভিপি পদের পাঁচ জনের কারও বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়নি। এ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে গড়পতায় পাঁচ শতাংশ। দু’একজনের ক্ষেত্রে ১০ বা ১৫ শতাংশ বেতন-ভাতা বাড়ানো হলেও বেতন-ভাতা কমানোর নজিরও রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের।
এদিকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে আদিবা রহমানকে নিয়োগ দেয়ার পর ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ১৩.৭২ শতাংশ। আর নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ বেড়েছে ১৯.০২ শতাংশ। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ছিল ৬২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা সর্বশেষ ২০১৯ সালে দাঁড়িয়েছে ৭১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডেল্টা লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডি’র পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের সঙ্গেও মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, তবে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, আদিবা রহমান ২০০৫ সালের জুনে যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউট থেকে এসিআইআই-লাইফ ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে ২০০০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের রোচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আর ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে। এ ছাড়াও ভারতের কোদাইকানাল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে হাইস্কুল ডিপ্লোমা ও ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালুরেট লেভেল শেষ করেন ১৯৯৫ সালের মে মাসে।
২০০৫ সালে এসিআইআই ডিগ্রি অর্জনের পর আদিবা রহমান পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে বীমা পেশায় যোগদান করেন ২০০৬ সালের মার্চে। এরপর ২০১৩ সালের আগস্টে কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। পদোন্নতি পেয়ে তিনি ডেল্টা লাইফের এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হন ২০১৪ সালের এপ্রিলে। আর মূখ্য নির্বাহীর চলতি দায়িত্ব পান ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। এরপর একই বছরের ১ নভেম্বর থেকে তিনি মূখ্য নির্বাহী হিসেবে আইডিআরএ’র অনুমোদন লাভ করেন।