অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) ১২২ ঋণ খেলাপি ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাই কোর্ট।
আদালতের নির্দেশের পরও এই ১২২ ঋণ খেলাপি ব্যক্তি বা সত্তা নির্ধারিত তারিখে হাই কোর্টের হাজির হননি। আদালত বলেছে, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হল।
আর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয়েছে তাকে।
বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক বেঞ্চ গত ৯ মার্চ এ আদেশ দেয়। তবে আদেশের বিষয়টি সোমবার জানা যায়।
পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করেছিল হাই কোর্ট।
সাময়িক অবাসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর ওই আদেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত।
সেদিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি আদালতে হাজির হননি।
এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে আদালত। তাদের বক্তব্য শোনার পরই ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এই আদেশ হয়।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।
২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।
এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।
পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর আদালত পিপলস লিজিংয়ের ঋণ গ্রহীতাদের একটা তালিকা চায় সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের কাছে।
নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর ২৩ নভেম্বর প্রায় ৫০০ জন ঋণ গ্রহীতার একটি তালিকা দাখিল করা হয়। সে তালিকা দেখার পর গত ২১ জানুয়ারি আদালত ২৮০ ঋণ খেলাপি ব্যক্তি, সত্তাকে তলব করে। পরে আরও ৬ ব্যক্তি বা সত্তাকে এ তালিকায় যুক্ত করা হয়।
অবসায়ক আসাদুজ্জামানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ২৮০ ঋণ খেলাপি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), লিজ ফাইন্যান্স (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ), টার্ম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ), হোম লোন (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) ও মার্জিন লোনসহ মোট ছয় ধরনের ঋণ নিয়েছেন।
তার মধ্যে লিজ ফাইন্যান্সে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ কোটি ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪৭১ টাকা। লিজ ফাইন্যান্সে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৮ টাকা।
টার্ম লোনের (পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ) খেলাপি ৮৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭১ টাকা, টার্ম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি ৩০ লাখ ৫ হাজার ৭৭৬ টাকা।
হোম লোনের (পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদের ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৭ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ১৪৩ টাকা। আর মার্জিন লোনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৮ হাজার ১৩ টাকা।
মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।